◑◑হেলাল আহমেদ◑◑ দিরাই থেকে
দিরাই’র কোটি টাকার কালনী সেতু এখন নৌকা ঘাট হিসেবে ব্যাবহৃত হচ্ছে।অসহায়ের মতো দাড়িয়ে থাকা সেতুটির উপর অটোরিকশা ষ্ট্যান্ড, চায়ের দোকান, ইমারতের মালামাল রাখার জায়গায় পরিণত হয়েছে, পাশাপাশি ধান শুকনো হচ্ছে নির্বিঘ্নে।
কালনী সেতু যে স্বপ্ন নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিলো সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেলো একমাত্র সংযোগ সড়কের কারনে।
সংযোগ সড়ক না থাকায় কাজে আসছে না ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু।
নির্মাণের পরও ১০ বছর ধরে নৌকা যোগে পারাপার হচ্ছেন দুই পাড়ের অন্তত ৫০/৬০ গ্রামের মানুষ। এতে পূর্বের ন্যায় ভোগান্তিতে পড়ছেন দুই লক্ষাধিক মানুষ।সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়ক হয়নি এখনো।
সেতুর অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাওর পাড়ি দিচ্ছেন দিরাই’র হাওর পাড়ের দুই লক্ষাধিক মানুষ।
শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটে অথবা মোটরসাইকেল আর বর্ষা মৌসুমে নৌকাযোগে উপজেলা সদরে যাতায়াত করেন পূর্বাঞ্চলের বাসিন্দারা। যুগ যুগ ধরে যোগাযোগ সমস্যার কারণে কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি থেকেও বঞ্চিত এলাকার কৃষকরা।
এসব সমস্যা সমাধানে স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে দিরাই উপজেলা সদরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কালনী নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ হয়। কিন্তু সেতুর পূর্ব পারে সংযোগ সড়কের পর আর কোন সড়ক নেই। ফলে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি কোন কাজে আসছেনা দিরাইবাসীর।
দিরাই উপজেলার প্রায় ২টি ইউনিয়নের মানুষের সদর উপজেলায় যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা এটা। যদি সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হতো তাহলে সবার জন্যই সুবিধা হতো।
রোগী কিংবা জরুরি কাজে সহজে যাতায়াতের কোনো রকমের ব্যাবস্থা না থাকায় অনেক সময় নানান সমস্যায় পড়তে হয় ওই এলাকার বাসিন্দাদের। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লেও সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।সংযোগ সড়কের কাজটি সম্পন্ন হয়ে গেলে হাওর পাড়ের খুব উপকার হয় বলে জানান এলাকাবাসী।
সেতুটি নির্মাণ হলেও সংযোগ সড়ক নির্মিত হয়নি। এ কারণে এ সেতুটি কোনো কাজে আসেনি। এতে শিক্ষার্থীসহ ভোগান্তিতে পড়েছেন দুই এলাকার হাজার হাজার মানুষ। চলাচল না করতে পারায় কোনো কাজেই আসছে না সেতুটি।
এলাকাবাসী বলেন, এতো বছর হয়ে গেছে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে অথচ সংযোগ সড়ক নেই।এ সেতু নির্মাণের পর জনগণের দুর্ভোগ আরও চরমে ওঠে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘এটা সেতু না যেন পর্যটন স্পট।প্রতিদিন ব্রিজের উপর থাকা টং দোকানে চা খেতে আসেন এলাকার অনেক যুবক, আর হাওরের ছবি তুলেন।যেখানে থাকার কথা গাড়ির শাঁ শাঁ শব্দ,সেখানে আছে নৌকার ইঞ্জিনের বটবট শব্দ।অথচ হাজারো মানুষের স্বপ্নের এমন মৃত্যু হবে কেউ কল্পনা করতে পারেনি।
সেতু নির্মাণের পর সংযোগ সড়ক না করে ফেলে রাখা সাধারণ মানুষের সঙ্গে তামাশার শামিল। সেতুর সংযোগ সড়ক দ্রুত নির্মাণের দাবি জানান এলাকাবাসী।
দিরাই-জগদল এলাকার হাজারো মানুষের স্বপ্ন ছিল এই সেতুটি সড়কে যুক্ত হবেন পূর্ব দিরাইয়ের বাসিন্দারা। আর এ সড়কটি দিরাই উপজেলার জগদল (হোসেনপুর) থেকে জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া হয়ে জগন্নাথপুর-আউশকান্দি সড়কে যুক্ত হবে। এর ফলে ভাটির উপজেলা দিরাইয়ের মানুষ ২০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ বাঁচিয়ে উপজেলা সদর থেকে বিভাগীয় শহর সিলেট বা রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবেন। কিন্তু নির্মাণের ১০ বছর পার হলেও সেতুটি ব্যবহার হচ্ছে না। সেতু থাকলেও রাস্তার সংযোগ স্থাপন হয়নি আজও।
এ অবস্থায় এখনো ওই এলাকার মানুষকে হাওর পাড়ি দিতে নৌকার উপর তাদের ভরসা। এতে করে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ।
এলাকাবাসী জানান, প্রতিটি গ্রামের মানুষকে উপজেলা শহরে যেতে হলে বেশি সময় জীবনের ঝুকি নিয়ে ঘর থেকে বের হতে হয়। এ ছাড়াও উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে নিতে বা বাজার থেকে ক্রয় করা পণ্য আনতে নৌকা দিয়ে পারাপারের সময় কৃষককে ব্যয় করতে হয় অতিরিক্ত অর্থ।
এ কারণে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করেও লাভের মুখ দেখতে পারেন না হাওরাঞ্চলের কৃষকরা। এভাবেই বর্ষায় নৌকা কেন্দ্রিক ও হেমন্তে পায়ে হাঁটা যোগাযোগ ব্যবস্থায় অপচয় হয় নাগরিক শ্রম ও অর্থ।
বর্ষাকালে নদীতে পানি বেড়ে গেলে শিশু শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। নিজ সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে অজানা আশঙ্কায় অপেক্ষায় থাকেন অভিভাবকরা।কদমতলী গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, সারা জীবন আমাদের বাবা-দাদারা দাড় টানা খেয়া নৌকা দিয়ে নদী পার হয়েছেন। এখন আমরা ইঞ্জিন চালিত খেয়া নৌকা দিয়ে পার হই। উন্নয়ন বলতে এতটুকুই।
২২ কোটি টাকার সেতু চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে শুধুমাত্র রাস্তার অভাবে একটি গ্রাম ছাড়া আর কোন গ্রামের মানুষ সে সেতু ব্যবহার করতে পারছে না।
এলজিইডির দিরাই উপজেলা প্রকৌশলী বলেন, কালনী সেতুর সংযোগ সড়কের সঠিক কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই।
https://slotbet.online/