◑হেলাল আহমেদ◑ দিরাই থেকে
উন্নয়ন বঞ্চিত ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জের দিরাই-শাল্লায় বইছে নির্বাচনী হাওয়া। সামনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন—আর তারই প্রেক্ষাপটে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। প্রশ্ন একটাই—কে হবেন আগামীর দিরাই-শাল্লার কর্ণধার?
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা পুরোদমে চলছে। প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে গিয়ে নিজেদের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। তারা সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক, মতবিনিময় সভা এবং লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে নিজেদের প্রচার চালাচ্ছেন।
দিরাই-শাল্লা সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। ভোটাররাও প্রার্থীদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছেন এবং নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।
নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীরা এলাকার উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ সহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর আলোকপাত করছেন এবং ভোটারদের কাছে তাদের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরছেন।
জুলাই বিপ্লবের পর চিত্র পাল্টে গেছে। গণহত্যাকারী দলটির নাম আর কেউ মুখে নিতে চান না। সুবর্ণসুযোগ তৈরি হয়েছে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থিদের জন্য। ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে উঠতে চান বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী,জমিয়ত ও এনসিপির নেতারা। চষে বেড়াচ্ছেন ভোটের মাঠ।
নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি নিয়ে জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন তারা।
এই আসনে সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ নাছির উদ্দিন চৌধুরী। তবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে নানা রোগে ভুগছেন। তার পক্ষে কর্মী-সমর্থকরা মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে চালাচ্ছেন প্রচার-প্রচারনা।
তবে দিরাই-শাল্লা’র রাজনীতির চিত্র শুধু বিএনপিকেন্দ্রিক নয়। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও রয়েছে শক্তিশালী অবস্থান। দলটির একক মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন
ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।জনসেবামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে ইতোমধ্যে এলাকায় পরিচিত হয়ে উঠেছেন।তার জনপ্রিয়তাও কম নয়।
বিএনপি থেকে সুনামগঞ্জ ২ (দিরাই-শাল্লা ) আসনে দলীয় মনোনয়নের আশায় রয়েছেন একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী। তাদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাম বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ নাছির উদ্দীন চৌধুরী।
অপরদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী দুই প্রার্থী তাহির রায়হান চৌধুরী পাভেল ও মিফতা উদ্দিন চৌধুরী আছেন মাঠে।
সাবেক বিচারপতি মিফতা উদ্দিন চৌধুরী রুমি ১৯৯৬ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি থেকে এমপি হওয়ায় ও পরবর্তীতে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া অবসরের পর আবার রাজনীতির মাঠে নামতে চাচ্ছেন।
এছাড়া রয়েছেন তরুণ রাজনীতিবিদ যুক্তরাজ্য প্রবাসী জেলা বিএনপির উপদেষ্টা তাহির রায়হান চৌধুরী পাভেল।
পাশাপাশি মুসলিম ভোটারদের ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন জমিয়তের মাওলানা শুয়াইব আহমেদ। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে জনপ্রিয়তা গড়েছেন তিনি। রাজনৈতিক প্রচারণার পাশাপাশি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে প্রার্থী হওয়ার বার্তা দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে হিন্দু ভোটারদের পুঁজি করতে কৌশলগতভাবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতা অনিক রায়কে প্রার্থী করার কথা ভাবছে দলটি। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে তৎপর হওয়ার চেষ্টা করছেন অনিক।
এছাড়া মাঠে নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন গনমুক্তি জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী রাসিদ আহমেদ।
উল্লেখ্য এই আসনে দশকের পর দশক কব্জা করে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
সুরঞ্জিত সেনের মৃত্যুর পর এলাকাটি দখলে রাখেন তার স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্তা। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের পর তিনিও পালিয়ে যান।সাথে নিয়ে যান এলাকায় একসময়কার প্রভাশালীদের।
এই আসন হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত তাই সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সুরঞ্জিত সেন বারবার নির্বাচিত হয়েছেন।তবে প্রতিটি নির্বাচনে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতেন সাবেক এমপি নাছির উদ্দীন চৌধুরী।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন বিএনপি,জামায়াত,জমিয়ত,এনসিপি ও গণমুক্তি জোটের প্রার্থীরা।
দীর্ঘদিন ‘সেন’ পরিবারকে সমর্থন জানিয়েও এর প্রতিদান পায়নি দিরাই-শাল্লাবাসী। উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত এই অঞ্চল শুধু সেন পরিবার ও তার সহযোগীরা শাসন করেছেন। কিন্তু এর প্রতিদান দিয়েছেন খুব কম।সেন পরিবার ও তার সহযোগীরা ছিলো জলমহাল ও টেন্ডার নিয়ে ব্যাস্ত,এখন দেখার বিষয় অবহেলিত এই জনপদের মানুষ এবার সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লার)মসনদে কাকে বসায়।
দিরাইয়ে এখন একটাই আলোচনার বিষয়; কে পাবেন জনতার সমর্থন?
কে হবেন আগামীর সংসদ সদস্য? জাতীয় নির্বাচনের ঢাক বাজতেই দলীয় নেতারা যেমন সক্রিয়, তেমনি সাধারণ জনগণও অপেক্ষায়—যিনি হবেন তাদের প্রকৃত প্রতিনিধি, উন্নয়নের কান্ডারি।
সময়ই বলে দেবে— দিরাই-শাল্লা রাজনৈতিক ইতিহাসে আগামী অধ্যায় রচনা করবেন কে?
https://slotbet.online/